স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেটে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটম (ইজিবাইক) চার্জিংয়ের নামে নগরজুড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ গ্যারেজ। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অলিগলি–পাড়ামহল্লায় দিন-রাত ব্যাটারি চার্জে অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ। এতে শুধু লোডশেডিং বাড়ছে না—বিদ্যুৎ বিভাগের লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন।
বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ—এলাকার যেসব গ্যারেজে প্রতিরাতেই ১০০–১৫০টি অটোরিকশা চার্জ দেওয়া হয়, সেখানে আবাসিক সংযোগ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের একটি অংশের যোগসাজশে। ফলে একই এলাকায় বারবার লোডশেডিং হলেও এসব গ্যারেজে সারারাত চার্জিং চলে নির্ভয়ে।
এদিকে এসব গোপন চার্জিং স্টেশনের কারণে অতিরিক্ত লোড পড়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে ঘন ঘন ত্রুটি। গ্রাহকেরাও মাস শেষে পাচ্ছেন অস্বাভাবিক বাড়তি বিল—যেন অপচয়ের দায় শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, সিলেট মহানগরীতে অর্ধলক্ষাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশার মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার নিয়মিত চার্জ হয় নগরের বিভিন্ন গ্যারেজে। প্রতিটি রিকশা চার্জে লাগে ১০–১২ ইউনিট বিদ্যুৎ। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে শুধু এই খাতে—যা জাতীয় সিস্টেমের জন্য বড় ধরনের চাপ।
একজন অটোরিকশা চালক জানান, কদমতলীর একটি গ্যারেজে তিনি প্রতিরাতে গাড়ি চার্জ দেন। চার্জ দিতে মালিককে গুণতে হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, আর লোডশেডিং হলে ২০০ টাকা পর্যন্ত। “আমাদের গ্যারেজে প্রতিরাতে ১৫০টি মতো গাড়ি চার্জ হয়”—বললেন ওই চালক।
অন্যদিকে বৈধ প্যাডেল রিকশাচালকদের অভিযোগ—অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা শুধু দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে না, বরং গ্যারেজগুলোর কারণে তাদের এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। তারা দাবি করেন—“গ্যারেজ আর বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের চুক্তিতে প্রতিদিন লাখ টাকার বিদ্যুৎ চুরি হয়।”
নগরীর আখালিয়া, নেহারীপাড়া, নয়াবাজার, কালিবাড়ি, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, শেখঘাট, কলাপাড়া, দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, কদমতলী (কাউছার মিয়ার গ্যারেজ—তৃতীয় তলা মসজিদ গলি), কদমতলী ফেরিঘাট (সুরমা নদীরপাড়—সুজন মিয়ার গ্যারেজ), আলমপুর (লামারগাঁও পয়েন্টে আলম মিয়ার দুটি গ্যারেজ), গোটারটিকর (খান বাড়ি রোড—পাইপ ফ্যাক্টরি পাশের মনোহর মিয়ার বড় গ্যারেজ), শাহজালাল উপশহর, তেররতন, সৈদানিবাগ, সবুজবাগ, শিবগঞ্জ, লামাপাড়া, শাহী ঈদগাহ, রায়নগর, মেজরটিলা ও ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর সংখ্যায় অবৈধ চার্জিং স্টেশন চালু রয়েছে।
